ভারতের প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় কেসুত বা ভৃঙ্গরাজ (Eclipta alba) পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। অঞ্চলভেদে এটি কেশরাজ, কালোকেশী বা কেসুত নামে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে গ্রামীণ মহিলারা মাথার ত্বকে এই পাতা ব্যবহার করে চুলের যত্ন নিয়েছেন। আধুনিক যুগে শহুরে সৌন্দর্যচর্চার বাজারেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ভেষজ।
কেন কেসুত পাতা বিশেষ?
কেসুত পাতায় আছে প্রাকৃতিক অ্যালকালয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ। গবেষকদের মতে, এসব উপাদান মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং হেয়ার ফলিকলকে সক্রিয় করে। প্রাণীভিত্তিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, কেসুত পাতার নির্যাস চুলের বৃদ্ধির গতি বাড়াতে সহায়ক। যদিও মানুষের ক্ষেত্রে আরও গবেষণা দরকার, তবে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এটি বহুকাল ধরে “কেশরক্ষা” ভেষজ হিসেবে পরিচিত।
চুলের জন্য উপকারিতা
চুল পড়া কমায়: নিয়মিত কেসুত পাতার রস বা তেল ব্যবহার করলে চুল ভাঙা ও পড়া কমতে পারে।
ঘন ও কালো চুল: আয়ুর্বেদ মতে, পাতাটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং অকালপক্কতা বিলম্বিত করে, ফলে চুল থাকে কালো ও ঘন।
খুশকি প্রতিরোধ: পাতার প্রদাহনাশক উপাদান মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে খুশকি প্রতিরোধে সহায়ক।
স্ক্যাল্পকে পুষ্টি দেয়: পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষকে রক্ষা করে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
ব্যবহার পদ্ধতি (লোকজ ও আয়ুর্বেদিক ধারা)
1. তাজা রস: কেসুত পাতা বেটে রস বের করে সরাসরি মাথার ত্বকে লাগানো হয়।
2. তেল প্রস্তুত: নারকেল বা তিলের তেলের সঙ্গে কেসুত পাতার নির্যাস মিশিয়ে ফুটিয়ে রাখা হয়। নিয়মিত ব্যবহারে এটি কার্যকর হেয়ার অয়েল হিসেবে পরিচিত।
3. লেপ: পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে চুলের গোড়ায় লাগানো হয়। এটি মাথা ঠান্ডা রাখে ও খুশকি কমাতে সাহায্য করে।
স্বনামধন্য আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা.গুপ্ত বলেন, “ভৃঙ্গরাজ আয়ুর্বেদে চুলের ওষুধ নামে পরিচিত। তবে এর ব্যবহার অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। বাজারজাত তেলে ভেজাল থাকলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।”
সতর্কবার্তা
কারও মাথার ত্বকে অ্যালার্জি থাকলে সরাসরি রস ব্যবহার না করে আগে সামান্য অংশে টেস্ট করা উচিত।
শিশু, গর্ভবতী নারী বা যাঁরা দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।
কেসুত পাতার কার্যকারিতা নিয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে বটে, তবে মানুষের ওপর বড় আকারের পরীক্ষা এখনও সীমিত—এটি মনে রাখা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রাকৃতিক উপাদান নির্ভর চুলের যত্নে কেসুত পাতা আন্তর্জাতিক বাজারেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। আয়ুর্বেদভিত্তিক গবেষণা ও মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হলে কেসুত পাতার তেল ও প্রসাধনী শিল্পে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব।
No comments:
Post a Comment